যুগের খবর ডেস্ক: করোনার কারণে গত কয়েক বছর ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সিলেবাস নির্ধারণ না করায় কলেজগুলো অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নিতে পারছে না। তবে কোনো কোনো কলেজ নিজ উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা নিচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সিলেবাস নির্ধারণ ও শিক্ষা বোর্ডগুলো সঠিক নির্দেশনা দিতে না পারায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সমস্যা সমাধানে আগামীকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে। এ সভায় সিলেবাস নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম আজকালের খবরকে বলেন, সিলেবাস ঠিক করতে একটু দেরি হচ্ছে। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটি অনুমোদন হয়ে যাবে।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা মহামারি শুরু হয়। ওই বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরীক্ষার্থীদের এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ফল দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দুই বছর কম বিষয় ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, সিলেবাস নিধারণ করতে ১২ জুন (আজ) মন্ত্রণালয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষা পূর্ণ সিলেবাসে হবে কিনা?
শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অন্তত এক মাস আগে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে কলেজগুলো বার্ষিক পরীক্ষা নিতে পারছে না।
রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহসিন কবির বলেন, বছরের প্রথমদিকে সিলেবাস দেওয়ার কথা। কিন্তু এনসিটিবি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড তা দিতে পারছে না। এ কারণে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস দেওয়ার জন্য তিনি নিজে তিনবার এনসিটিবির চেয়ারম্যানকে তাগাদা দিয়েছেন জানিয়ে অধ্যাপক মহসিন কবির বলেন, আমি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা সিলেবাস দিতে পারছেন না। তারা বলছেন, সিলেবাস অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সিলেবাস অনুমোদনের বিষয়টিকে একাডেমিক বিষয় উল্লেখ করে অধ্যক্ষ কবির বলেন, এসব বিষয়ে মন্ত্রী ও সচিবের পেছনে দৌড়াতে হবে কেন? বোর্ড নিজেরা অনুমোদন দিলে কি হবে না?
শিক্ষা বোর্ডেও কলেজ শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কলেজগুলো পূর্ণ সিলেবাসেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পূর্ণ সিলেবাসেও বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে অনেক অংশ থাকে, যা সব শিক্ষার্থীর পড়তে হয় না। সিলেবাস প্রকাশ না হওয়ায় এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুশতাক আহমেদ ভূইয়া জানান, এখন তারা দ্বাদশ শ্রেণির (এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী) টেস্ট পরীক্ষা নিচ্ছেন। আর একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, যারা ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস এখন পর্যন্ত প্রকাশ না হলেও তারা পূর্ণ সিলেবাস অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেবাস দিয়ে দিলে ভালো হতো। এরপরও আমরা যেহেতু পর্যাপ্ত সময় পেয়েছি এর জন্য প্রায় পূর্ণ সিলেবাসেই শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ডের গত বছরের নির্দেশনা অনুযায়ী এটি করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হবে, নাকি পূর্ণ সিলেবাসে সে সম্পর্কে নতুন কোনো নির্দেশনা আমরা পায়নি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ২৫ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে (সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে) নেওয়া হবে। তবে পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে হলেও পূর্ণ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। ২০২৪ সালের পরীক্ষা পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিগগিরই তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাবেন। মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর প্রায় দেড় মাস চলে গেলেও কলেজগুলোকে সিদ্ধান্ত জানতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
Leave a Reply